বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবার্ষিকীতে পশ্চিমবাংলা জুড়ে দলমত নির্বিশেষে শ্রদ্ধা জানালেন সর্বস্তরের মানুষ। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল না রাজনৈতিক দলগুলিও। তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম–সহ বাংলার অধিকাংশ দলই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিদ্যাসাগরকে শ্রদ্ধা জানায়।
এরই মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি টুইটকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এদিন বিদ্যাসাগরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক টুইটে তিনি মনে করিয়ে দেন বিদ্যাসাগর মূর্তি ভাঙার ঘটনা। হামলাকারীদের তিনি ‘কয়েকজন বহিরাগত’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘বাংলা ভাষার পথিকৃৎ তথা বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টা বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষ জন্মদিনে আমার শ্রদ্ধা জানাই। তিনি আজীবন বাল্য বিবাহ রোধে লড়াই করেছেন। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে বিধবা বিবাহ প্রচলনে ব্রিটিশ সরকারকে রাজি করিয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর বাংলার গর্ব। কিন্তু ২০১৯ সালে কয়েকজন বহিরাগত বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে। ওই ঘটনায় বাংলার ঐতিহ্য ও গরিমা নষ্ট করার চেষ্টাই প্রকাশ পেয়েছে।’ এর পরই তাঁর টুইট ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের মে মাসে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির তৎকালীন সভাপতি অমিত শাহ কলকাতায় একটি রোড শোয়ে অংশ নেন। সেই মিছিলে অসংখ্য মানুষ যোগ দেন। কিন্তু সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ও কলেজ স্ট্রিট দিয়ে সেই মিছিল যাওয়ার সময় কয়েকটি দল বিক্ষোভ দেখায়। ফলে ধুন্ধুমার ঘটনা ঘটে। সেই সময় কিছু দুষ্কৃতী বিদ্যাসাগর কলেজের ভেতরে ঢুকে বিদ্যাসাগর মূর্তি ভাঙচুর করে। ওই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি দুই দল পরস্পরকে দোষারোপ করে। তবে এদিন টুইটে বহিরাগত বলার মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকেই ইঙ্গিত করেছেন। এর আগেও বিভিন্ন সভা–সমিতিতে বিজেপিকে বারবার বহিরাগত বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর টুইটের সমালোচনা করেছেন বিজেপির অনেক নেতাই। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টির জন্য তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করেন।
এদিন কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মালা দেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষা ও শিক্ষার প্রচার এবং প্রসারে তিনি যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তার সুফল আজ আমরা ভোগ করছি। এ ছাড়াও সেই সময় তিনি অগ্রণী ভূমিকা না নিলে এখনও কুশিক্ষা এবং কুসংস্কার গোটা বাঙালি জাতির ওপর চেপে বসে থাকত। শুধু বাংলাই নয়, তাঁর ভূমিকা থেকে সমৃদ্ধ এবং উপকৃত হয়েছে গোটা দেশ।’ এর পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে ওঠে বিদ্যাসাগর মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রীর টুইটের কথাও তাঁর কানে যায়।
জবাবে লকেট এদিন রাজ্য সরকারকে পাল্টা কটাক্ষ করে বলেন, ‘বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে রাজ্য সরকার তো তদন্ত শুরু করেছিল। সেই তদন্তের ফল কী হল? রাজ্য সরকার তো সেই তদন্ত থেকে কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। আর পারবেই বা কী করে? নিজেরাই ওই কাজে যুক্ত থাকলে, তদন্তের ঠিক ফল কী করে বের হবে?’ এদিন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়ও টুইট করে বিদ্যাসাগরকে শ্রদ্ধা জানান।